সুনামগঞ্জ , শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ , ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি ও চার বাম দল এইচএসসিতে ফল বিপর্যয়, অভিভাবকরা হতাশ যাদুকাটা নদীর তীরে গ্রামবাসীর মানববন্ধন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও পাড়কাটা বন্ধের দাবি শাল্লায় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে রাস্তা নির্মাণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব না : নির্বাচন কমিশনার সই হল ‘জুলাই সনদ’ বালু লুটের অভিযোগে মামলা,আসামির তালিকায় প্রতিবাদকারীদের নাম জেলা প্রশাসককে পেয়ে গ্রামবাসী উচ্ছ্বসিত সুনামগঞ্জে দৈনিক কালবেলা’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মহিলা দলের সমাবেশ সিলেট বোর্ডে ইংরেজিতেই ফল বিপর্যয় ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : মিজান চৌধুরী খাসিয়ামারা নদীতে বালুখেকো সিন্ডিকেট বেপরোয়া যাদুকাটার বালু লুটের সময় ‘টুঁ শব্দ’ না করলেও কাজ শেষে প্রতিবাদ যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন: ৩৭ জনের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা ঋণ পরিশোধের পরও বৃদ্ধার বসতঘরে সুদখোরের তালা সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের দাবি শহীদ মিনার ভাঙায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি ‘মব’ সৃষ্টি করে যাদুকাটার বালু লুট জড়িত একাধিক সিন্ডিকেট যাদুকাটায় ‘মব সৃষ্টি করে’ বালু লুট, বন্ধ না হলে নদী ভাঙন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ

শহীদ মিনার ভেঙে নির্মাণ হচ্ছে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’ ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ

  • আপলোড সময় : ১৫-১০-২০২৫ ০৮:১২:৩০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৫-১০-২০২৫ ০৮:১২:৩০ পূর্বাহ্ন
শহীদ মিনার ভেঙে নির্মাণ হচ্ছে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’ ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার :: সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন নির্মাণ হচ্ছে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি এমন অবজ্ঞার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষজন। এদিকে শহীদ মিনারটি রক্ষা করে সংস্কার ও আগের আকৃতিতে ফিরিয়ে নিতে কলেজ কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন করেছে ছাত্রদল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে। অপরদিকে আজ বুধবার সকাল ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ষাট ও সত্তরের দশকের সাবেক শিক্ষার্থী ও একাধিক ভিপি জানান, পুকুরঘাটের সামনে পুরনো ভবনের বারান্দাঘেঁষা শহীদ মিনারটি ষাটের দশকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্মিত হয়। সাবেক ছাত্রনেতারা এটি নির্মাণে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে। ১৯৭২ সালে কলেজের যুদ্ধজয়ী ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজ উদ্যোগে ছাত্র সংসদের মাধ্যমে পূর্বের স্থানে আবারও একই আদলে শহীদ মিনারটি পুনঃনির্মাণ করেন। তাই এই শহীদ মিনারটি একই সঙ্গে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। এক দশক আগে কলেজের পশ্চিমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্দিষ্ট ডিজাইনে শহীদ মিনার নির্মাণ করলেও ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ মিনারটি অক্ষত রাখা হয়। জানা গেছে, ২০১৯ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপিত হয়। এ উপলক্ষে ভাস্কর হামিদুজ্জামানের মাধ্যমে কৃতী শিক্ষার্থী ফলক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই খাতে প্রায় ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০২৪ সালে প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক নির্মাণের জন্য কলেজের শিক্ষকদের একটি অংশ ঐতিহাসিক শহীদ মিনার ভাঙার প্রসঙ্গ তুললে সাফ ‘না’ করে দেন তৎকালীন অধ্যক্ষ রজত কান্তি সোম মানস। তিনি জানিয়ে দেন এই শহীদ মিনার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। স্থানীয় আবেগ এতে জড়িত। প্রায় ২ মাস আগে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’ নির্মাণকাজ শুরু হলে বাস্তবায়নকারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঘটনাস্থলে গিয়ে কলেজের প্রবেশপথে তোরণের উত্তরের দিকে স্থান নির্বাচন করে। তখন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক পরিষদের কিছু শিক্ষক এতে বাধা দিয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর লক্ষ্যে ষাটের দশকে নির্মিত শহীদ মিনার ভেঙে এখানে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’ নির্মাণের স্থান দেখিয়ে দেয়। এসময় প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে ফলক নির্মাণ করতে হলে পুরনো স্থাপনা ভাঙতে হবে। এ খাতে কোনও বরাদ্দও নেই। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দেয় নির্মাণ করতে হলে এখানেই করতে হবে। পরে ঠিকাদারকে বলিয়ে ঐতিহাসিক শহীদ মিনারটি গুঁড়িয়ে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’ নির্মাণের কাজ শুরুর সুযোগ করে দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঐতিহাসিক শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে ‘প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক’ নির্মাণের ছবি ভাইরাল হলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জেলার সর্বস্তরের মানুষজন। সাবেক শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ জানান। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদল অধ্যক্ষ বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। অবিলম্বে শহীদ মিনারের স্থানে কাজ বন্ধ রেখে শহীদ মিনার পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে স্থানীয় সুধীজন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসককে অবগত করে অবিলম্বে শহীদ মিনারটি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন। স্মারকলিপি প্রদানকারী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বখতিয়ার ইয়াসির নাঈম বলেন, এই শহীদ মিনার শুধু একটি স্থাপনা নয় এটি মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ। জেলাবাসী, বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীর আবেগ জড়িত। এটি ভাঙ্গা গণঅবজ্ঞার শামিল। ফলকের কাজ বন্ধ রেখে অবিলম্বে শহীদ মিনারকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে লিখিত স্মারকলিপিও দিয়েছি। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইজাজুল হক চৌধুরী নাছিম বলেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ঐতিহাসিক শহীদ মিনারটি রক্ষায় বুধবার সকাল ১১টায় আমরা কলেজ ক্যাম্পাসে সমবেত হবো। তিনি সকলকে কলেজ ক্যা¤পাসে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য আ ত ম মিসবাহ বলেন, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ মিনার আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ। শহীদ মিনারটি যেভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা লজ্জাজনক। অবিলম্বে গৌরবের শহীদ মিনারকে পূর্বের অবস্থায় পুনঃস্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি প্রাক্তন কৃতী শিক্ষার্থী ফলক কলেজের অন্য স্থানে করা হোক। সুনামগঞ্জ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, এটি নির্মাণের আগে আমি নিজে কলেজে গিয়ে প্রবেশপথের তোরণঘেঁষা উত্তর দিকে নির্মাণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কলেজের শিক্ষক পরিষদ ও অধ্যক্ষ মহোদয় শহীদ মিনার ভেঙে ওখানে নির্মাণের স্থান দেখিয়ে দেন। তারাই ঠিকাদারকে বলে শহীদ মিনারটি ভাঙিয়েছেন। এখন জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় সুধীজন আমাকে ঐতিহ্যবাহী শহীদ মিনারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন একটি শহীদ মিনার কয়েক বছর আগে নির্মিত হয়েছে। তাই শিক্ষক পরিষদ ও আমরা ওখানে কৃতী শিক্ষার্থী ফলক নির্মাণে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বলি। আমরা এই ঐতিহাসিক শহীদ মিনারটি সম্পর্কে জানতাম না। এখন ভাঙ্গার পর আমরা জানতে পেরেছি। আজ ছাত্ররা স্মারকলিপিও দিয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭৪ সালে নির্বাচিত ভিপি সাইফুর রহমান শামছু বলেন, ১৯৬৬ সনে আমি কলেজে ভর্তি হয়ে এই শহীদ মিনার দেখেছি। পরে ১৯৭১ সালে হানাদাররা এটি ভেঙে ফেলে। পরে আমরা যারা কলেজের ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম তারা এসে আবার শহীদ মিনারটি পুনঃনির্মাণ করি। এটি আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির প্রতীক। এটিকে এভাবে গুড়িয়ে দেওয়া ইতিহাসের প্রতি অবজ্ঞা। অবিলম্বে আমাদের স্মৃতির শহীদ মিনারটি রক্ষা করা হোক।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
সই হল ‘জুলাই সনদ’

সই হল ‘জুলাই সনদ’